Skip to main content

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে জামায়াত-এনসিপির চাওয়া প্রতিফলিত হয়েছে: বিএনপি

 



জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সুপারিশে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাওয়া প্রতিফলিত হয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। দলটির অভিমত, বিএনপি সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) হওয়া সত্ত্বেও কমিশনের সুপারিশে তাদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশেষ করে, বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট (দ্বিমত)’ সনদে লিপিবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা রাখা হয়নি। এতে বিএনপি বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।


বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে আলোচনায় নেতারা এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। তিনি সভায় সভাপতিত্ব করেন।


জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, আগামী সংসদ নিয়মিত কাজের পাশাপাশি প্রথম ২৭০ দিন (৯ মাস) ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে কাজ করবে। গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো এই সময়ের মধ্যে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে। তবে পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। এ বিষয়গুলো সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়।


স্থায়ী কমিটির সদস্য সূত্রে জানা যায়, সভায় একজন সদস্য গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টিকে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জারিকৃত লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (এলএফও) এবং আইয়ুব খান প্রবর্তিত বেসিক ডেমোক্রেসি বা মৌলিক গণতন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি মনে করেন, কমিশনের সুপারিশে দুটি দলের প্রস্তাব ও ঐকমত্য কমিশনের চিন্তাভাবনা জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।


লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (এলএফও), ১৯৭০ ছিল পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জারি করা একটি ফরমান। এতে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের নীতিসমূহ উল্লেখ করা হয়েছিল। ১৯৭০ সালের ৩০ মার্চ এই এলএফও ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয়, আইনসভায় ৩০০টি আসন থাকবে। ফ্রেমওয়ার্কে রাষ্ট্রের দুই অংশের জন্য সংখ্যানুপাতের কথা বলা হয়। তাতে উল্লেখ ছিল, জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বানের ১২০ দিনের মধ্যে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে। তবে এই সময়ের মধ্যে নতুন আইনসভা সংবিধান প্রণয়নে ব্যর্থ হলে নতুন নির্বাচন দেওয়া হবে।


অন্যদিকে ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ হচ্ছে ১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান প্রবর্তিত একটি পরোক্ষ নির্বাচনভিত্তিক শাসনব্যবস্থা, যা মূলত তাঁর ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার একটি উপায় ছিল। এই ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষ সরাসরি প্রেসিডেন্ট বা সংসদ সদস্য নির্বাচন করত না। বরং ‘মৌলিক গণতন্ত্রী’ নামে পরিচিত প্রায় ৮০ হাজার স্থানীয় জনপ্রতিনিধির একটি নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হতো, যাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা নির্বাচিত হতেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের পতনের মধ্য দিয়ে এই ব্যবস্থার অবসান হয়।


সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ অভিমত প্রকাশ করেন, কমিশনের সুপারিশ জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এর মধ্য দিয়ে কমিশন চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে ঐক্যের পরিবর্তে কার্যত অনৈক্য সৃষ্টি করছে। বিএনপি এখন মনে করছে, ঐকমত্য কমিশন, সরকার এবং আরও দু-একটি রাজনৈতিক দল একই পক্ষ। এসব পদক্ষেপকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন সঠিক সময়ে না করার ‘অপচেষ্টা’ হিসেবে দেখছে দলটি।


সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

Comments