সত্য সংবাদ ডেস্ক:
জীবনযাত্রার ব্যয় এত দ্রুত বাড়ছে যে, মানুষ এখন সঞ্চয়ের কথা ভাবতেই পারছেন না। বাসাভাড়া বৃদ্ধি, পণ্য মূল্যবৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ জটিলতা ও সুদহার কমায় আয়-ব্যয়ের ব্যবধান এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে মাস শেষে টিকে থাকা এখন রীতিমতো যুদ্ধ। তাই সঞ্চয়পত্র কেনা তো দূরের কথা, অনেকে পুরনো সঞ্চয় ভেঙে দৈনন্দিন খরচ সামলাতে বাধ্য হচ্ছেন।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
এ বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মেয়াদে এক হাজার ৯৪৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল চার হাজার ১০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে এই পতনের হার দাঁড়িয়েছে ৫২.৬৫ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, দেশে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও আয়-ব্যয়ের ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় মানুষের সঞ্চয় করার সামর্থ্য কমছে। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রের সুদহার নিয়ে বিভ্রান্তি, নিয়মের জটিলতা এবং ব্যাংক ও সরকারি বিল-বন্ডে তুলনামূলক বেশি সুদের কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের আকর্ষণ কমে যাচ্ছে। ফলে মানুষ নতুন করে সঞ্চয়পত্র কিনছেন কম, বরং আগের সঞ্চয়পত্র ভাঙাচ্ছেন বেশি।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, টানা তিন অর্থবছর ধরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট বিক্রি কমেছে ছয় হাজার ৬৩ কোটি টাকা।
এর আগে দুই অর্থবছরে নিট বিক্রি কমেছিল যথাক্রমে ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ও তিন হাজার ২৯৬ কোটি টাকা।
অর্থবছরের শুরুতে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ ছিল তিন লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। তবে সেপ্টেম্বর শেষে মোট বিনিয়োগ গিয়ে তিন লাখ ৪০ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে নিরাপদ বিনিয়োগমাধ্যম হিসেবে সঞ্চয়পত্রের ওপর মানুষের আস্থা আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের একজন শাখাপ্রধান কালের কণ্ঠকে জানান, সরকারের নীতির কারণে মানুষের আগ্রহ কিছুটা কমেছে ঠিকই, কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। কারণ এখনো দেশের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের খাত সঞ্চয়পত্র।
যদিও এখন সঞ্চয়পত্রের চেয়ে ব্যাংকের এফডিআরের সুদহার বেশি। কিন্তু দেশের ব্যাংক খাতের যে অবস্থা, কোন ব্যাংক কখন বন্ধ হয়ে যায়, তার ঠিক নেই। ব্যাংকে বিনিয়োগ আরো বিপজ্জনক। তাই দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের অনেকেই মেয়াদ শেষ হলেও আবার আমাদের ব্যাংকে সঞ্চয়পত্রেই বিনিয়োগ করছেন। এটার চাহিদা সারা জীবন থাকবে বলে আমার ধারণা।
মূল্যস্ফীতি ও জীবিকা ব্যয়ের চাপে সাধারণ মানুষ কেন সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে বাধ্য হচ্ছেন, তা বোঝা যায় কয়েকটি বাস্তব পরিস্থিতি থেকে।
কেরানীগঞ্জের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মেহজাবিন আক্তার ও তাঁর স্বামী শহিদুল ইসলাম দুজন মিলে তিন বছর আগে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনছিলেন। তিন মাস পর পর মুনাফা তুলতেন। কিন্তু বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, সন্তানের পড়ালেখার খরচ বৃদ্ধি ও বাসাভাড়া বাড়ার কারণে মাস শেষ হওয়ার আগেই দুজনের বেতনই ফুরিয়ে যায়। মেয়ের কলেজে ভর্তি এবং ঘরভাড়া দিতে তিনি গত আগস্টে দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে বাধ্য হন। তাঁর ভাষায়, 'আগে বেতন থেকে কিছুটা রাখতে পারতাম, এখন সেটা অসম্ভব।' চট্টগ্রামের লালখান বাজারের ৫০ বছর বয়সী ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিমের অবস্থা আরো কঠিন। অর্থনৈতিক স্থবিরতায় তাঁর দোকানের বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। কাঁচামাল কিনতে ও ব্যবসা চালিয়ে নিতে নগদ অর্থের প্রয়োজন হলেও ব্যাংকের উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে তিনি পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে বাধ্য হন। তাঁর মতে, 'ব্যবসা বাঁচানোই এখন বড় কথা, সঞ্চয় রাখলে লাভ কী?'
এ বিষয়ে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, 'যেকোনো ধরনের ব্যাংক বিনিয়োগের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি করা হয়েছিল। তাই মানুষও এখানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বিনিয়োগ করার জন্য। এখন ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ সরকার উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং সেখানেও সুদের হার ভালো। এ কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে বিল বন্ডের দিকে বিনিয়োগের স্থানান্তর লক্ষ্য করা যাচ্ছে।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, 'জনগণের কাছে অধিকতর লাভজনক বিকল্প বিনিয়োগের সুযোগ যখন তৈরি হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই জনগণ বিনিয়োগ স্থানান্তর করবে। আর সরকার নিজেও চাচ্ছে সঞ্চয়পত্রের পাশাপাশি ট্রেজারি বিল বন্ডে মানুষের আগ্রহ স্থানান্তরিত হোক।'
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীন সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবার সঞ্চয়পত্র। এই সঞ্চয়পত্রে এত দিন সাড়ে সাত লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার ছিল ১২.৫০ শতাংশ; এখন তা কমিয়ে করা হয়েছে ১১.৯৩ শতাংশ। এক বছরের জন্য ৯.৮১ শতাংশ মুনাফা মিলবে, যা আগে ১০.২০ শতাংশ ছিল। আর সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে এই মুনাফার হার ছিল ১২.৩৭ শতাংশ, সেটা কমিয়ে ১১.৮০ শতাংশ করা হয়েছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
এ বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মেয়াদে এক হাজার ৯৪৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল চার হাজার ১০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে এই পতনের হার দাঁড়িয়েছে ৫২.৬৫ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, দেশে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও আয়-ব্যয়ের ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় মানুষের সঞ্চয় করার সামর্থ্য কমছে। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রের সুদহার নিয়ে বিভ্রান্তি, নিয়মের জটিলতা এবং ব্যাংক ও সরকারি বিল-বন্ডে তুলনামূলক বেশি সুদের কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের আকর্ষণ কমে যাচ্ছে। ফলে মানুষ নতুন করে সঞ্চয়পত্র কিনছেন কম, বরং আগের সঞ্চয়পত্র ভাঙাচ্ছেন বেশি।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, টানা তিন অর্থবছর ধরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট বিক্রি কমেছে ছয় হাজার ৬৩ কোটি টাকা।
এর আগে দুই অর্থবছরে নিট বিক্রি কমেছিল যথাক্রমে ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ও তিন হাজার ২৯৬ কোটি টাকা।
অর্থবছরের শুরুতে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ ছিল তিন লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। তবে সেপ্টেম্বর শেষে মোট বিনিয়োগ গিয়ে তিন লাখ ৪০ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে নিরাপদ বিনিয়োগমাধ্যম হিসেবে সঞ্চয়পত্রের ওপর মানুষের আস্থা আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের একজন শাখাপ্রধান কালের কণ্ঠকে জানান, সরকারের নীতির কারণে মানুষের আগ্রহ কিছুটা কমেছে ঠিকই, কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। কারণ এখনো দেশের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের খাত সঞ্চয়পত্র।
যদিও এখন সঞ্চয়পত্রের চেয়ে ব্যাংকের এফডিআরের সুদহার বেশি। কিন্তু দেশের ব্যাংক খাতের যে অবস্থা, কোন ব্যাংক কখন বন্ধ হয়ে যায়, তার ঠিক নেই। ব্যাংকে বিনিয়োগ আরো বিপজ্জনক। তাই দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের অনেকেই মেয়াদ শেষ হলেও আবার আমাদের ব্যাংকে সঞ্চয়পত্রেই বিনিয়োগ করছেন। এটার চাহিদা সারা জীবন থাকবে বলে আমার ধারণা।
মূল্যস্ফীতি ও জীবিকা ব্যয়ের চাপে সাধারণ মানুষ কেন সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে বাধ্য হচ্ছেন, তা বোঝা যায় কয়েকটি বাস্তব পরিস্থিতি থেকে।
কেরানীগঞ্জের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মেহজাবিন আক্তার ও তাঁর স্বামী শহিদুল ইসলাম দুজন মিলে তিন বছর আগে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনছিলেন। তিন মাস পর পর মুনাফা তুলতেন। কিন্তু বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, সন্তানের পড়ালেখার খরচ বৃদ্ধি ও বাসাভাড়া বাড়ার কারণে মাস শেষ হওয়ার আগেই দুজনের বেতনই ফুরিয়ে যায়। মেয়ের কলেজে ভর্তি এবং ঘরভাড়া দিতে তিনি গত আগস্টে দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে বাধ্য হন। তাঁর ভাষায়, 'আগে বেতন থেকে কিছুটা রাখতে পারতাম, এখন সেটা অসম্ভব।' চট্টগ্রামের লালখান বাজারের ৫০ বছর বয়সী ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিমের অবস্থা আরো কঠিন। অর্থনৈতিক স্থবিরতায় তাঁর দোকানের বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। কাঁচামাল কিনতে ও ব্যবসা চালিয়ে নিতে নগদ অর্থের প্রয়োজন হলেও ব্যাংকের উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে তিনি পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে বাধ্য হন। তাঁর মতে, 'ব্যবসা বাঁচানোই এখন বড় কথা, সঞ্চয় রাখলে লাভ কী?'
এ বিষয়ে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, 'যেকোনো ধরনের ব্যাংক বিনিয়োগের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি করা হয়েছিল। তাই মানুষও এখানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বিনিয়োগ করার জন্য। এখন ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ সরকার উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং সেখানেও সুদের হার ভালো। এ কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে বিল বন্ডের দিকে বিনিয়োগের স্থানান্তর লক্ষ্য করা যাচ্ছে।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, 'জনগণের কাছে অধিকতর লাভজনক বিকল্প বিনিয়োগের সুযোগ যখন তৈরি হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই জনগণ বিনিয়োগ স্থানান্তর করবে। আর সরকার নিজেও চাচ্ছে সঞ্চয়পত্রের পাশাপাশি ট্রেজারি বিল বন্ডে মানুষের আগ্রহ স্থানান্তরিত হোক।'
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীন সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবার সঞ্চয়পত্র। এই সঞ্চয়পত্রে এত দিন সাড়ে সাত লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার ছিল ১২.৫০ শতাংশ; এখন তা কমিয়ে করা হয়েছে ১১.৯৩ শতাংশ। এক বছরের জন্য ৯.৮১ শতাংশ মুনাফা মিলবে, যা আগে ১০.২০ শতাংশ ছিল। আর সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে এই মুনাফার হার ছিল ১২.৩৭ শতাংশ, সেটা কমিয়ে ১১.৮০ শতাংশ করা হয়েছে।
Comments
Post a Comment