সিপন আহমেদ, মানিকগঞ্জ: আগামীকাল ১৩ নভেম্বর ঢাকায় আওয়ামী লীগের ঘোষিত লকডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মানিকগঞ্জ জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। জেলার প্রবেশপথ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে, স্থাপন করা হয়েছে চেকপোস্ট। পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি এবং প্রশাসনিক সমন্বয় কার্যক্রম।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জেলার সাতটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সড়ক, বাসস্ট্যান্ড ও নদীপথে অতিরিক্ত ২২০ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। শহর ও উপজেলা পর্যায়ে বিশেষ টহল ও চেকপোস্টে যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া জেলা পুলিশের মোবাইল টিম ও টহল ইউনিট সার্বক্ষণিক সক্রিয় রয়েছে এবং থানা পর্যায়ে রিজার্ভ ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার ইয়াছমিন খাতুন বলেন, “রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে কেউ যাতে নাশকতা বা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা না করতে পারে, সে জন্য জেলা পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং সন্দেহজনক চলাচল নজরদারিতে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নাশকতা ও নাশকতার পরিকল্পনায় জড়িত সন্দেহে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা প্রক্রিয়াধীন।
শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ জানান, উথুলি মোড়ে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া পাটুরিয়া ফেরিঘাট, আরিচা লঞ্চঘাট ও শিবালয় বাসটার্মিনালে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন, “যানবাহনে তল্লাশি ও সন্দেহজনক ব্যক্তির গতিবিধি নজরদারিতে রয়েছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা নাশকতা সহ্য করা হবে না।”
উল্লেখ্য, এর আগে রবিবার রাতে শিবালয়ে একটি স্কুলবাসে ও সাটুরিয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের সামনে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়। এ ছাড়া ঢাকা–আরিচা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দেয় স্থানীয় ছাত্রলীগের একদল কর্মী। এসব ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, পাটুরিয়া ফেরিঘাট, মানিকগঞ্জ শহর, শিবালয়, সিংগাইর ও ঘিওর উপজেলা সদরে অতিরিক্ত নজরদারি রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য নাশকতা প্রতিরোধে র্যাব ও পুলিশের যৌথ টহল দল মাঠে কাজ করছে।
জেলার সরকারি ও বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা—জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ লাইন, বিদ্যুৎ অফিস, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফেরিঘাট এলাকায় বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাতে কোনো অগ্নিসংক্রান্ত ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
তবে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও দেশে পুনরায় আগুন সন্ত্রাস ফিরে আসায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শহরের বাজার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, কী ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে তারা শঙ্কিত ও অনিশ্চিত।
বাসস্ট্যান্ড এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, “২০১৩–১৪ সালের মতো যদি আবার অগ্নিসন্ত্রাস শুরু হয়, তাহলে ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে। বিক্রি কমেছে, দোকান আগেভাগেই বন্ধ করে দিচ্ছি।”
সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেউ কেউ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও পুলিশি উপস্থিতি ও টহল বৃদ্ধি তাদের কিছুটা আশ্বস্ত করেছে।

Comments
Post a Comment